দেখা হবে জান্নাতে
"দেখা হবে জান্নাতে"
পর্ব-০৭+০৮
#পর্বঃ৭
#আবরার একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো।
মালিহা বুঝতে পারছে না কি করবে এখন।
হটাৎ করেই একটা বুদ্ধি এলো তার মাথায়।
পাশে থাকা জগ থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে অল্প করে ছিটিয়ে দিলো আবরারের মুখে।
ধরফর করে উঠে বসলো আবরার।
চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়িয়েই পাশে থাকা জগটা হাতে নিয়ে পুরো একজগ পানি ঢেলে দিলো মালিহার মাথায়।হাত থেকে জগ টা রেখেই
ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো আবরার।
আবরারঃHey rubbish,কোন সাহসে আমার মুখে পানি দিলেন? what a nonsense?
Don’t cross your limit. You are nobody of mine, mind it.
#এটা বলেই আবার ঘুমিয়ে পরলো আবরার।
আর মালিহা সেখানেই নির্বাক পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
মালিহা ভেবেছিলো আবরার হয়ত শুধুই একটু বকাবকি করবে, এর বেশি আর কি ইবা করবে। কিন্তু ও যে এমন একটা কাজ করবে মালিহা সেটা ভাবতেই পারেনি।
মালিহা মনে মনে ভাবছে,
মালিহাঃকত আশা ছিলো ফজরে তাকে ডেকে উঠিয়ে একসাথে সালাত আদায় করবো,কুরআন তিলাওয়াত করবো, কিন্তু কি হলো এসব?
সত্যিই কি এসব হওয়ার ছিলো?
খুব করে চাইতাম আল্লাহ যেন এমন কাউকে আমার লাইফে পাঠান যে আমাকে দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করবে।
দুজনে একি সাথে জান্নাতের পথে হাটবো,সেই পথে হাটতে গিয়ে যদি কখনো হোচোট খাই কোনো শক্ত পাথরে তখন যেন তার দুহাতে লুকিয়ে রেখে আমার দুহাত,ভরসা দিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "ভয় পেওনা আছি তো আমি,ক্লান্তি যদি ছুয়ে দেয় তোমায়,আমার পায়েই হেটো তুমি জান্নাতের ই পথে।
আসুক বাধা,আসুক ঝড়।
লড়বো এক ই সাথে।"
হায় সব যে অধরাই থেকে গেলো।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরলো মালিহা।
#বেলা প্রায় ৮ টা বাজে।
মালিহা এখনো নিচে ডাইনিং এ আসেনি বলে সাবিহা বেশ কটু কথা বললে রেবেকা বেগম সেটার প্রতিবাদ করে উঠলেন।
রেবেকা বেগমঃআহ্ সাবিহা থামতো,তোর তো কোনো কাজ করতে হচ্ছে না, ময়না তো আছেই তবুও কেন এসব বলছিস?নতুন জায়গা তাই হয়ত ওর ঘুম হয়নি,বা অন্য কোনো কারনে অসুস্থ ও থাকতে পারে।
সাবিহা আর কোনো কথা না বলে ওর রুমের দিকে হাটা দিলো।রেবেকা বেগম একমনে চা পান করে যাচ্ছেন।
#আবরার ঘুম থেকে উঠে দাঁড়াতেই বেশ চমকে গেলো।
মেয়েটা ফ্লোরে শুয়ে আছে কেন?
আবরারঃওর কি কিছু হয়েছে নাকি?সে যাই হয় হোক তাতে আমার কি? ফ্রেস হয়ে অফিসে যেতে হবে।
এটা বলেই ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিয়েও থেমে গেলো আবরার।
এগিয়ে গেলো মালিহার দিকে।
ও বুঝতে পারছে না এখন ঠিক কি করা উচিৎ।
আবরারঃ একবার ডাকবো। আচ্ছা ডেকেই দেখি।
Hellow শুনছেন?
#নাহ্ কোনো সাড়াশব্দ নেই।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবরার মালিহার কপালে হাত দিয়ে বেশ চমকে গেলো।
গা যেন পুড়ে যাচ্ছে।
গতকাল রাতের কথা মনে পরে গেলো। আবরার ভাবতে লাগলো,
আবরারঃনাহ্ এটা হয়ত ঠিক হয়নি।অত সকালে মাথায় পানি ঢেলে দিয়েছি বলেই হয়ত এতো জ্বর এসেছে মেয়েটার।
(ও তো জানেনা এটা ছাড়াও গতকাল রাতে ঘন্টা খানেকের মতো পানিতে ভিজে ছিলো মালিহা।)
#খুব অনুশোচনা হচ্ছে আবরারের।
বিরবির করে বলতে লাগলো,
আবরারঃআমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি।আমার কিছু করার নেই, আমি জেনেশুনে এরকম একটা আনসোসাল মেয়েকে কিভাবে মেনে নিবো।
তার যে বড় কথা হচ্ছে আমি তো কখনোই ভুলতে পারবো না রিয়াকে।
এজন্যই তো এতো কষ্ট দিচ্ছি এই মেয়েটাকে,যাতে করে সে নিজে থেকেই এ বাড়ি ছেরে চলে যায়।
কিন্তু এখন কি করবো আমি,এভাবে ফ্লোরে থাকলে তো জ্বর আরো বেড়ে যাবে।
এখন তো সে ঘুমিয়েই আছে দেখবে না,যাই খাটে শুইয়ে দিয়ে আসি।
এটা বলেই মালিহাকে পাচকোলা করে উঠে দাড়ালো আবরার।
ধীরেধীরে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে গায়ের উপর টেনে দিলো চাদর টা।
#কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসের জন্য রেডি হয়ে ডাইনিং রুমে গেল আবরার।
ওকে দেখেই রেবেকা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
রেবেকা বেগমঃ কিরে বাবা বৌমা কোথায়?
আবরারঃ ঘুমোচ্ছে।
রেবেকা বেগমঃএতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে? শরীর খারাপ নাকি?
আবরারঃউফ্ আম্মি, আমি কি তোমার বকবকানি শোনার জন্য এখানে এসেছি?
তুমি চেয়েছিলে আমি ওকে বিয়ে করি। হ্যা করেছি তো। তোমার ইচ্ছে তো পূর্নতা পেয়েছে।এখন আর কিছু বলতে আসবে না আমাকে।
#এটা বলেই চলে যেতে লাগলো আবরার।
রেবেকা বেগমঃ খেয়ে যা বাবা।
আবরারঃখাওয়ার ইচ্ছে টা ই মরে গেছে।
আবরার না খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হবার সাথেসাথেই সাবিহা বলে উঠলো,
সাবিহাঃ এবার খুশি হয়েছো তো আম্মি।তুমি তো এটাই চেয়েছিলে। কোথা থেকে এক গেও ভুত কে নিয়ে এলে আবরার এর জন্য।নিজের ছেলের সুখ শান্তির কথা একবারের জন্য ও ভাবলে না তুমি।কেমন মা তুমি?
কখনোই সন্তান দের কে বুঝতে চেষ্টা করলে না।
তিন্নিঃআহ্ আপি, থামতো।আম্মি কে এভাবে বলছিস কেন?
তিন্নিকে থাকিয়ে দিয়ে রেবেকা বেগম বলে উঠলেন,
রেবেকা বেগমঃ তোরা সবাই একদিন বুঝতে পারবি যে মালিহা সত্যিই একটা হিরের টুকরো।ও গেও ভুত না।ও ই প্রকৃত স্মার্ট।
তিন্নি মা দেখে আয় তো কি করছে মালিহা।
তিন্নিঃ আচ্ছা আম্মি যাচ্ছি।
(তিন্নির মধ্যে দ্বীনের বুঝ না থাকলেও তিন্নি আবরার আর সাবিহার থেকে ভিন্ন,ওদের মতো অতটা উচ্ছ্রিংখল না)।
#তিন্নি মালিহার রুমে গিয়ে মালিহাকে অনেক বার ডাকলেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আস্তে করে ধাক্কা দেওয়ার সময় খুব চমকে ওঠে। এত্ত জ্বর।
তিন্নি দৌড়ে ওর মায়ের কাছে চলে আসে।
তিন্নিঃআম্মি ভাবির গা তো অনেক গরম। খুব জ্বর এসেছে।
রেবেকা বেগমঃ সে কিরে,এজন্যই হয়ত এখনো ঘুম থেকে উঠতে পারেনি।চল তো গিয়ে দেখি।
#রেবেকা বেগম মালিহার কপালে হাত দিয়ে জ্বর টা বোঝার চেষ্টা করছে। জলপট্টি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে মালিহা চোখ মেলে তাকায়।
রেবেকা বেগমঃএখন কেমন লাগছে মামনি?
মালিহাঃভালো মা। কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।
রেবেকা বেগমঃঅনেক বেলা হবার পরেও তুমি নিচে যাওনি বলে তিন্নিকে পাঠিয়েছিলাম তোমার রুমে। পরে তিন্নি বললো তোমার নাকি খুব জ্বর এসেছে। এসে দেখি সত্যিই জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।ময়নাকে বলছি তোমার নাস্তা টা উপরে নিয়ে আসতে।নাস্তা খেয়ে এই ঔষধ টা খেয়ে নিও মা।
মালিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
সাবিহাঃ বাসায় আসতে না আসতেই জ্বর বাধিয়ে নিয়েছো।
ভালো তো খুব ভালো।১০ টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকার ধান্দা। সব ই বুঝি আমরা।
রেবেকা বেগমঃআহ্ সাবিহা কেন এসব বলছিস।থাম তো।
সাবিহা আর কিছু না বলেই দমদম করে রুমের বাইরে চলে গেলো।
মালিহা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।গতকাল সারাদিনের না খাওয়া তার উপর এত্ত জ্বর ও যেন কথা বলার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে।
#কোনো রকম নাস্তা টা খেয়েই ঔষধ খেয়ে নিলো মালিহা।
এখন হয়ত
জ্বর টা একটু কমেছে।
ভালো লাগছে কিছুটা।
মালিহা এখন ভাবতে শুরু করলো কিভাবে কি হলো।
মালিহাঃআমি তো তাকে সালাতের জন্য ডাকছিলাম।তারপর উনি উঠলো না।
আমি পানি ছিটিয়ে....
(ওসব কথা মনে পরেই মালিহার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো।)
মা বললো তিন্নি এসে আমাকে খাটেই দেখেছে।কিন্তু আমি তো ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। খাটে এলাম কি করে?
তাহলে কি উনি....
এটা ভাবতেই মালিহার দুটি চোখ খুশিতে ঝাপসা হয়ে এলো।
#পর্বঃ৮
মালিহাঃআমি তো তাকে সালাতের জন্য ডাকছিলাম।তারপর উনি উঠলো না।
আমি পানি ছিটিয়ে....
(ওসব কথা মনে পরেই মালিহার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো।)
মা বললো তিন্নি এসে আমাকে খাটেই দেখেছে।কিন্তু আমি তো ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। খাটে এলাম কি করে?
তাহলে কি উনি....
(এটা ভাবতেই মালিহার দুটি চোখ খুশিতে ঝাপসা হয়ে এলো।)
উনি আমাকে কোলে করে খাটে শুইয়ে দিয়েছেন!
লজ্জায় দুহাতে মুখটা ঢেকে ফেললো মালিহা।
আয়নার সামনে গিয়ে বারবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে নিজেকে আর হেসে যাচ্ছে আনমনেই।
#কিছুটা সুস্থ ফিল করায় মালিহা কিচেন রুমে গেলো।
রেবেকা বেগম রান্না করছেন আর তাকে সাহায্য করছে ময়না।
রেবেকা বেগমঃএখন কেমন লাগছে মা? জ্বর টা কি একটু কমেছে?
মালিহাঃজ্বী আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে।
আপনি এদিকে আসুন মা আমি রান্না টা শেষ করি।এই বয়সে এখনো রান্না ঘরে আসতে ভালো লাগে আপনার?
এদিকে আসুন মা,আমি পারবো।
রেবেকা বেগমঃ দূর বোকা মেয়ে,তুমি যাও রুমে গিয়ে রেষ্ট নাও।আমার ছেলেমেয়ে গুলা খুব পছন্দ করে আমার হাতের রান্না।তাই একটু কষ্ট হলেও রান্না টা নিজেই করি।
এখন তো তুমি এসে গেছো আমার আর চিন্তা নেই।
তোমার সংসার তুমিই বুঝে নিও কিন্তু আগে তো একটু সুস্থ হতে হবে।
(এটা বলেই হেসে দিলেন রেবেকা বেগম।)
মালিহাঃ আচ্ছা মা তিন্নি কোথায় ওকে তো দেখছি না।
রেবেকা বেগমঃ তিন্নি তো কলেজে গেছে। ৩ টার দিকে আসবে।
রেবেকা বেগম ময়নাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
রেবেকা বেগমঃসাবিহার রুমে একটু যাতো ময়না,গিয়ে দেখতো সুবাহ(সাবিহার মেয়ে)
কান্না করছে কিনা।
ময়নাঃ আইচ্চা আম্মা যাইতাছি।
রেবেকা বেগমঃসত্যি করে একটা কথা বলবে মালিহা?
মালিহাঃজ্বী মা বলুন।
রেবেকা বেগমঃ গতকাল রাতে কি আবরার খুব খারাপ ব্যবহার করেছে তোমার সাথে?
#এমন প্রশ্ন শুনতেই মালিহা যেন চুপশে গেলো। চোখ যেন ভিজে আসছে।তবুও খুব কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে হাসি মুখেই উত্তর দিলো,
মালিহাঃ না মা তেমন কিছু হয়নি।
রেবেকা বেগমঃ আমি আমার ছেলেকে চিনি রে মা।খুব বদ মেজাজী ও।
আমার জন্য ই তুমি এতো কষ্ট পাচ্ছো মা।আমাকে ক্ষমা করে দিও।
(এটা বলেই কেঁদে দিলেন রেবেকা বেগম)
মালিহাঃ এটা কি বলছেন মা? নিজেকে এভাবে দোষারোপ করবেন না। আমি আমার তকদীর কে মেনে নিয়েছি।
শুধু এতোটুকুই দোয়া করবেন, আমি যেন ধৈর্য্য হারা না হয়ে যাই।
#ময়নাকে রুমে দেখেই সাবিহা বলে উঠলো,
সাবিহাঃকিরে তুই এখানে?
ময়নাঃআম্মায় পাঠাইলো, সুবাহ মামনি কানদে নাকি হেইডা দেহোনের লাইগা।
সাবিহাঃআম্মি কি করছে রে?
ময়নাঃনতুন বউ এর লগে গল্প করতাছে আর রান্না করতাছে।
সাবিহাঃআচ্ছা তুই সুবাহ কে একটু দেখে রাখ আমি আসছি।
আর হ্যা, সুবহা কান্না করলে আমাকে ডাক দিবি, তুই ধরবিনা কিন্তু।দূরে বসে থাক।
সাবিহা রান্নাঘরে ঢুকে মালিহা কে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলো,
সাবিহাঃবাহ্, শাশুড়ী রান্না করছে আর তুমি বসে বসে মজা দেখছো।
চক্ষুলজ্জা বলতেও কি কিছু নেই তোমার? নাকি নিজেকে নবাবজাদি মনে করো?
জ্ঞান বুদ্ধি বলতে তো কিচ্ছু নেই।গেও ভুত একটা।
রেবেকা বেগমঃ এমন করে বলছিস কেন সাবিহা। আমিই ওকে নিষেধ করেছি রান্না করতে।তাছাড়া ও তো এখনো নতুন। দুটো দিন যাক, তারপর ওর সংসার তো ও ই বুঝে নিবে।
সাবিহাঃওর সংসার মানে?
আবরার কোনো দিন ওকে মেনে নিবে না।সারাজীবন এ বাড়ির চাকরানী হয়েই থাকতে হবে ওকে। আর হ্যা তুমি যেন ওকে একটুও আস্কারা না দাও,এই বলে রাখলাম আমি।
আর কিছু না বলেই সাবিহা হনহন করে হেটে গেলো ওর রুমে।
রেবেকা বেগমঃওর কথায় কিছু মনে করো না মা।ও ছোটো বেলা থেকেই খুব জেদি আর একরোখা টাইপের।ভালো মন্দ বোঝেনা বললেই চলে।সাবিহা আর আবরার হয়েছে একরকম। তিন্নি আবার ওদের থেকে আলাদা।খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে।কিছুদিন আগে সাবিহা এবাড়িতে এসেছে।সুবহার বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে গেছে। আগামী মাসেই চলে আসবে।তারপরেই ও চলে যাবে ওর শশুর বাড়ি।এ কয়টা দিন একটু সয্য করো মা।
মালিহাঃনা মা, কি বলেন এসব। আপির যতোদিন ইচ্ছে এখানে থাকবে। হয়ত তার দৃষ্টিতে আমি আপনার ছেলের যোগ্য নই এজন্য ই এসব বলছে। কিন্তু সে যখন সত্যি টা বুঝতে পারবে তখন দেখবেন আর কোনো সমস্যা ই থাকবে না।আল্লাহ চাইলে আমার যথাযথ সম্মান অবশ্যই পাবো।
আচ্ছা মা আমি এখন যাচ্ছি।
রেবেকা বেগমঃআচ্ছা যাও।
#সন্ধার পরে তিন্নি এলো মালিহার রুমে।
তিন্নিঃভাবি আসবো?
মালিহাঃএতে আবার অনুমতি লাগে? এসো ভেতরে এসো।
তিন্নিঃএখন কেমন লাগছে ভাবি?
মালিহাঃআলহামদুলিল্লাহ,, ভালো লাগছে বোন।
তিন্নিঃভাবি তুমি কি পড়াশোনা বন্ধ করে দিবা?
মালিহাঃএখনো বুঝতে পারছি না।আর কয়েকমাস পরেই অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম।ভাবছি এক্সাম টা দিবো।
তিন্নিঃহ্যা ভাবি এক্সাম টা দিও। জীবনে নিজের পায়ে না দাঁড়ালে কারো কাছে দাম পাওয়া যায় না। অনার্স কমপ্লিট করে মাস্টার্স ও কমপ্লিট করবা। তারপরেই জবে ঢুকে যাবা।
মালিহাঃনিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে তুমি কি বোঝো তিন্নি?
তিন্নিঃ এই ধরো জব করলে নিজের ইচ্ছে মতো চলতে পারবা,কাউকে পরোয়া করতে হবেনা। কেউ কিছু বলতে পারবেনা। নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে তো এটা ই বুঝায়।
মালিহাঃআচ্ছা এতে কি লাভ হয়?
তিন্নিঃ এতে তুমি স্বাধীনতা পাবে। কারো অধীন থাকতে হবেনা।
মালিহাঃ আচ্ছা তিন্নি তুমি আমাকে বলোতো আমরা স্বাধীনতা চাই কেন?
তিন্নিঃএতে তুমি শান্তিতে থাকতে পারবে,কষ্ট থাকতে না।
মালিহাঃহুম, বুঝলাম। তাহলে তোমার মতে এই সবকিছু করতে হবে শান্তির জন্য,কি তাইতো?
তিন্নিঃহুম।
মালিহাঃআচ্ছা তিন্নি এবার বলো তুমি কি আমাকে এমন কোনো সিওরিটি দিতে পারবে যে, যারা জব করবে তারা ই হ্যাপি হবে।
জব না করলে হ্যাপি হওয়া যাবেনা?
আসোলে কি জানো তিন্নি,আমাদের কার জীবন কিভাবে অতিক্রম করতে হবে, কাকে কোন পথে চলতে হবে, এই সবকিছু যে আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত। সেই নির্ধারন পথে চললে জীবনে কেউ কখনো ব্যর্থ হবেনা।
তুমি বলছো জবের কথা, কিন্তু তিন্নি তুমিকি জানো পুরোপুরিভাবে দ্বীনের পথে থেকে আমাদের দেশে জব করাটা অসম্ভব প্রায়।
আগে তোমার দেখতে হবে কখন তোমার জন্য জব করা বৈধ।
জানো তিন্নি আল্লাহ আমাদের কে এমন একটা জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন যেখানে,
*তুমি যখন কণ্যা তখন তোমার দ্বায়িত্ব -তোমার পিতার উপর।
*তুমি যখন স্ত্রী তখন-তোমার স্বামীর উপর।
*সেই তুমিই যখন মা-তখন তোমার সন্তানের উপর।
আলহামদুলিল্লাহ,,,,
বয়স ভেদে তোমার ভরনপোষণ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব তাদের।
তাদের দ্বায়িত্ব যদি তুমি পালন করতে যাও তাহলে তুমি পারবে সঠিক ভাবে তোমার দ্বায়িত্ব পালন করতে?
#এবার আসো তোমার দ্বায়িত্ব কি।
আল্লাহ তোমাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন,
*সময় মত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায় করা।
*রমজানে সিয়াম রাখা।
*লজ্জা স্থানের হেফাজত করা।
*স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
ব্যাস এনাফ।
তুমি যদি এই চারটি কাজ করতে পারো তাহলে জান্নাতের আটটি দরজা ই তোমাকে ডাকবে,
এসো তিন্নি,আমার দিকে এসো।
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি প্রবেশ করবে চিরসুখের বাগান জান্নাতে।
#তুমি অফিস এ গেলে,
*সময় মতো সালাত আদায় নাও করতে পারো।
*সিয়াম রেখে সারাদিন ডিউটি করা কতটা কষ্টের সেটা একমাত্র সেই পুরুষ ই জানবে যাকে সারাদিন বাইরে ঘুরঘুর করতে হয়।
*এবার আসো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে,
লজ্জা স্থানের হেফাজত অথবা পরিপূর্ণ পর্দা করে জব করা আমাদের দেশে অসম্ভব প্রায়।এটাতো আগেই বলেছি।
*সবচে ইমপোর্টেন্ট পয়েন্ট হচ্ছে এটাই যে তুমি সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীরে কিভাবে তোমার সংসারের সব দ্বায়িত্ব পালন করে স্বামীকে সন্তুষ্ট করবে এটা বলো।
তিন্নি জানো সন্তানের সবচে বড় শিক্ষক কে?
তার মা।
মা হচ্ছে সন্তানের আদর্শ শিক্ষিকা। প্রত্যেক বাচ্চা ই নরম কাদা মাটির মতো।
যাকে চাইলেই তুমি যেকোনো আকার দিতে পারো।
তুমি চাইলেই তাকে ভালো বা মন্দ হিসেবে গড়ে তুলতে পারো। তুমি তাকে কিভাবে গড়ে তুলবে সেটা তোমার উপর নির্ভর করবে।আদর্শ সন্তান তৈরি করার জন্য ছোটোবেলা থেকেই তাকে ট্রেনিং দিতে হবে।কারন বড় হলেযে কাদা মাটি শক্ত হয়ে যাবে।যাকে চাইলেই তুমি যেকোনো আকার দিতে পারবে না।
এখন বলো তোমার এতো দ্বায়িত্ব থাকা সত্যেও তুমি কি যাইবে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করতে?
ইহি চাইবে না।
কেন চাইবে বলো!
তোমাকে তো পাগলা কুকুরে কামড়ে দেয়নি।
পুরুষেরা কি চায় জানো?
আনুগত্য।
স্ত্রীর আনুগত্য।
সে চায় তুমি যেন তার উপর ডিপেন্ডেট হও।
তবে ভেবোনা যেন সে তোমার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়।
সে চায় তুমি তাকে মূল্যায়ন করো।
সম্মান করো সবচে বেশি।
প্রকৃত পুরুষেরা কখনোই চায়না
তুমি বলো,
"আমি একাই ১০০"
সে চায় তোমার ৫০ আর তার ৫০ মিলেই ১০০ হোক।
এটা আবার ভেবোনা যেন, ইইইই সম্মান, ভালোবাসা সবকিছু কি আমিই দিয়ে যাবো?
আরে বোকা না শুধু তুমি দিবে কেন?
আমি বলছি তুমি যদি তাকে পর্যাপ্ত সম্মান, ভালোবাসা দিতে পারো তাহলে সে তোমাকে সম্মান করতে ভালোবাসতে বাধ্য।
সত্যিই বাধ্য।
ভালোবাসা কি জানো?
"আমি চাই জান্নাতে তুমিই আমার ৭০ টা হুরের রানি হও।"
"আমি চাই জান্নাতে যেন আমিই তোমার ৭০ টা হুরের রানি হই।"
বিশ্বাস করো তিন্নি এটাই ভালোবাসা।
প্রকৃত ভালোবাসা।
(এসব বলতে বলতে কখন যে ভিজে গেলো দুটি চোখ মালিহা বুঝতেই পারলো বা)
তিন্নিঃভাবি তুমি কিভাবে এতো সুন্দর করে বললে বলোতো একটু।
সত্যিই আমি কখনোই ভাবিনি এভাবে।
খুব ভালো লাগছে এখন।
অনেক কিছুই বুঝতে পারলাম।
অনেক কিছু বলবো তোমাকে।
অনেক কিছু শেখার আছে।
মালিহাঃআচ্ছা বোন তোমার যখন যে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করবে নির্দিধায় চলে আসবে আমার কাছে।
তিন্নিঃআচ্ছা ভাবি এখন যাই তাহলে।
মালিহাঃহুম,আচ্ছা তিন্নি তোমার ভাইয়া অফিস থেকে আসে কখন?
তিন্নিঃপ্রায় তো ৯ টা বেজে গেছে।অন্যান্য দিন তো আরো আগে চলে আসে।
চিন্তা কইরো না এসে পরবে।
তুমি তো দেখছি ভাইয়াকে চোখে হারাচ্ছো।
মালিহাঃযাও কি যে বলো না! (লজ্জা পেয়ে)
#তিন্নি চলে যাওয়ার প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আবরার এলো।
মালিহা খাটের উপরেই বসে আছে। আবরার
রুমে ঢুকেই শার্ট টা খুলে খাটের উপর ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
মালিহা একটু সামনের দিকে এগিয়ে আবরারের শার্ট টা হাতে নিলো।
মনে হচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ দুনিয়াতে আর নেই।
শার্ট টা জড়িয়ে ধরে মালিহা হারিয়ে গেলো গভীর আবেশে।
চলবে ইনশাআল্লাহ
.
.
লেখিকাঃরহিমা খানম
#গল্পটা কেমন লাগলো অব্যশয় কমেন্ট এ জানাবেন❤
♠️জাযাকাল্লহু_খাইরান❤️❤️
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন