গল্প-দেখা হবে জান্নাতে

"দেখা হবে জান্নাতে"


পর্ব-০৫+০৬


পর্বঃ-৫

#সারাদিন খাওয়া হয়নি,উফ খুব ক্ষুধা লেগেছে।খেতে যাবে এমন সময় মনে হলো উনি ও তো খান নি মনে হয়,সে আসুক তারপর একসাথে খাবো। 

এটা বলেই খাবার গুলো ঢেকে রেখে মালিহা বসে রইলো আবরারের অপেক্ষায়।

কিন্তু আবরার? 

কোথায় সে? 

রাত এখন ১১:২০ প্রায়।

কোথায় ও? 

এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মালিহার মাথায়।

এমন সময় কে যেন দরজায় নক করলো। মালিহার হৃদস্পন্দন যেন দ্বীগুন বেড়ে গেলো। 

হয়ত আবরার এসেছে।

সে কি বুঝতে পারবে আমাকে। 

আবার নক করার শব্দে মালিহার চিন্তা জগতের ছেদ ঘটলো।

তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখলো তার শাশুড়ী দাঁড়িয়ে আছে।

রেবেকা বেগিমঃ আবার আসলাম রে মা। 


মালিহাঃআসুন মা ভেরতে আসুন।

রেবেকা বেগম রুমে ঢুকে মালিহার হাত ধরে তার পাশে বসালেন।


রেবেকা বেগমঃ দেখ মা আজ থেকে তোমার নতুন জীবনের শুরু। একটা মেয়ের জীবনে স্বামীর গুরুত্ব কতটা এইটা হয়ত তোমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমি জানি এসব বিষয়ে তোমার যথেষ্ট দখল আছে।তাই তো একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হলেও তোমাকে নিয়ে এসেছি আমার অন্ধকার ঘরে। 


মালিহাঃ কিসের মিথ্যে মা?[বেশ অবাক হয়ে]


রেবেকা বেগমঃভেবেছিলাম আজ তোমাকে এসব কিছু বলবো না। কিন্তু আবরার টা এখনো আসছে না দেখে চলে এলাম। তোমার হয়ত একা একা ভালো লাগছে না। জানো মা তোমার শশুর যখন মারা যায় তখন সাবিহার বয়স প্রায় ১৫ বছর, আবরারের ১০ আর ওর ছোটো বোন তিন্নির প্রায় ৪। সবাই খুব করে বলেছিলো যেন আবার বিয়ে করে নেই।সন্তান দের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়ে গেলাম স্বামীর ভিটায়। আবরারের বাবার ব্যবসা প্রোপার্টি সব নিজ দ্বায়িত্বে সামলেছি যেটা একটা মেয়ের পক্ষে অসম্ভব প্রায়।খুব করে চেষ্টা করলাম ওদের কে মানুষের মতো মানুষ করার।কিন্তু কি মা জীবনের এই পর্যায়ে এসে অনুভব করছি একটাকেও প্রকৃত মানুষ করতে পারিনি(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)।

তবুও হাল ছাড়িনি।একটা মেয়ে চাইলেই অনেক কিছু সম্ভব। ভাবলাম দ্বীনদার কাউকে ঘরের বউ করে আনবো।কিন্তু না,আবরার চায় তার জীবন সংগী হবে খুব মডার্ন আর আধুনিক মনা।ওর জিদের কাছে হারতে বসছিলো আমার শেষ আশা ভরসা টুকুও।বাধ্য হয়ে মিথ্যের আশ্রয় নিতে হলো।আমার আবার হার্টে প্রব্লেম আছে। হটাৎ করেই অসুস্থতার ভান করলাম। আবরার পাগল প্রায় হয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো আমাকে।ডাক্তার কে আগে থেকেই সবকিছু বলে রেখেছিলাম।ডাক্তার আবরার কে জানালো আমি খুব অসুস্থ যেকোনো সময় চলে যেতে পারি। আবরার আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে ও এইটা শুনেই হাটু গেরে ধপাস করে বসে পরে ফ্লোরের উপর। ডাক্তার ওকে এটাও বলে দেয় যে আমাকে যেন কোনোভাবেই উত্তেজিত করা না হয়।তাহলে খুব বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।তখন ই আমি আবরারের কাছে তোমার কথা বলি।আমার অসুস্থতার কথা ভেবে ও আর না করতে পারেনি।ও হ্যা তোমাদের পাশের বাসার রিজিয়ার বোন আবার আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে, সেই সুবাদেই আমি তোমার সন্ধান পাই। আমার বিশ্বাস তুমি পারবে আমার সংসার টাকে গুছিয়ে নিতে।সাবিহা,আবরার,তিন্নি কাউকেই আমি মানুষ করতে পারিনি রে মা।(বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন রেবেকা বেগম)।তুমি আবার আমাকে ভুল বুঝোনা মা,আমি তোমাকে ঠকাই নি।দেখবে আল্লাহ তোমাকে খুব ভালো রাখবেন ইনশাআল্লাহ। 


মালিহাঃমা আপনি কাঁদবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনার ইচ্ছে পূরন করবো ইনশাআল্লাহ। এখন আর আপনার একার স্বপ্ন নেই আমারো আজ থেকে স্বপ্ন আর চেষ্টা একটাই আমার পরিবার কে নিয়ে একসাথে জান্নাতের পথে হাটা ইনশাআল্লাহ। 


মালিহার কথা শুনে রেবেকা বেগম যেন মরুভূমিতে পানির সন্ধান পেলেন।নিজ বাহু ডোরে জরিয়ে নিলেন মালিহা কে।


রেবেকা বেগমঃকি রে মা খাওনি এখনো? 


মালিহাঃআসোলে মা, উনি আসুক তারপর খাবো।(লজ্জা পেয়ে) 


রেবেকা বেগমঃহাহাহা,পাগল মেয়ে একটা।চিন্তা কইরো না। আমার ছেলেটা খুব একটা খারাপ ও না,যাকে একবার ভালোবাসে তার জন্য সব কিছু করতে পারে।আচ্ছা মা এখন যাই,আবরার হয়ত এসে যাবে এখনি।


মালিহাঃআচ্ছা মা, যান গিয়ে শুয়ে পরুন। 

রেবেকা বেগম যাওয়ার পরেই মালিহা আনমনে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলো। হারিয়ে গেলো চিন্তার জগতে।


মালিহাঃআল্লাহ তুমি আমাকে কোন পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে এলে? 

নিজেকে কি টিকিয়ে রাখতে পারবো এই কঠিন সংগ্রামে! তখন তো উনি বেশ ভালো কথাই বলেছিলেন। উনার জন্য ই সাবিহা আপু আমাকে কিছু বলতে পারেনি। মানুষ টা হয়ত খারাপ না। (তখন কার সেই কথা গুলো মনে হতেই মালিহা যেন মনের কোনে একটু খানি আশা খুজে পেলো।)দ্বীনি শিক্ষা পায়নি বলেই হয়ত এই অবস্থা।আল্লাহ তুমি তাকে সঠিক বুঝ দান কইরো।(অঝোরে গড়িয়ে পরছে মালিহার চোখের পানি)।


#মালিহা

দরজা টা লক করে আবারো বসে রইলো আবরারের অপেক্ষায়।

অপেক্ষার প্রহর গুলো যে কেন এমন হয়! এ যেন শেষ ই হতে চায় না।আবরার এর সাথে কিভাবে কি কথা বলে সেসব ভাবছে মালিহা।


#হটাৎ করে দরজা ধাক্কানোর শব্দে মালিহা ধরফর করে উঠে বসলো।কখন যেন চোখটা লেগে গিয়েছিলো টের ই পায় নি। 

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১:৩০ বাজে।

তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেরে শাড়িটা ঠিক করলো।

তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।আবরার কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে পরলো।মালিহা দরজাটা বন্ধ করে খাটের উপর গিয়ে বসে পরলো।


মালিহাঃআসসালামু আলাইকুম। 


আবরারঃওয়া আলাইকুমুস সালাম। 


#আবরার আর কোনো কথা না বলেই সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।


মালিহা অবাক দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। 

বালিশের নিচ থেকে সেই দোয়া লেখা কাগজ টা হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো সে।


#প্রায় ২০ মিনিট পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো আবরার।

মালিহা সেখানেই বসে আছে। 


ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে নিজের ভেজা চুল গুলো মুছছিলো ছোপায় বসে।


রুম টা এতোই নিরব যে মনেই হয় না সেখানে কোনো মানুষ জন আছে।কিছু ক্ষণ পরে আবরার খাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আবরার যতই এগিয়ে যাচ্ছে মালিহার হৃদস্পন্দন ততই বেড়ে যাচ্ছে।আবরার খাটের কাছে গিয়ে যখন ই হাত বাড়ালো মালিহা সাথে সাথে বলে উঠলো, 


মালিহাঃ এই যে মশাই,এতো দেরি করে এলেন কেন? কোথায় ছিলেন?আবরার কিছু বলতে শুরু করলে মালিহা তাকে থামিয়ে দিলো,আবরার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আবার বলতে শুরু করলো,


মালিহাঃওজু না থাকলে যান ওজু করে আসেন।দুজনে মিলে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে।আপনাকে তো আরো অনেক কথা বলার আছে। থাক এখন আর কিছু বলবো না।সালাত আদায় শেষে একসাথে বসে অনেক গল্প করবো।ও হ্যা এখনো তো খাই নি, চলেন খেয়ে নেই।বড্ড ক্ষুধা লেগেছে।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।


#এটা বলেই খাট থেকে নিচে নেমে দাড়ালো মালিহা।


এরপর আবরার যা বললো সেটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ধেয়ে আসলো মালিহার দিকে।এক নিমিষেই যেন থমকে দাড়ালো মালিহার পৃথিবী।


চলবে ইংশাআল্লাহ



"দেখা হবে জান্নাতে"

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

#পর্বঃ৬ 


মালিহাঃওজু না থাকলে যান ওজু করে আসেন।দুজনে মিলে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে।আপনাকে তো আরো অনেক কথা বলার আছে। থাক এখন আর কিছু বলবো না।সালাত আদায় শেষে একসাথে বসে অনেক গল্প করবো।ও হ্যা এখনো তো খাই নি, চলেন খেয়ে নেই।বড্ড ক্ষুধা লেগেছে।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।


#এটা বলেই খাট থেকে নিচে নেমে দাড়ালো মালিহা।


এরপর আবরার যা বললো সেটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ধেয়ে আসলো মালিহার দিকে।এক নিমিষেই যেন থমকে দাড়ালো মালিহার পৃথিবী।


আবরারঃHey, you. তখন থেকে পাগলের মতো কি সব বলেই যাচ্ছেন। অসয্য। আমি আপনার কাছে স্বামীর অধিকার ফলাতে আসিনি।আপনি ভাবলেন কি করে আপনার মতো একটা গেও ভুত কে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো?।বালিশ আর চাদর টা নেওয়ার জন্য ই এসেছিলাম। আপনার সাথে বেড শেয়ার করার মতো কোনো ইচ্ছে নাই।

বাধ্য হয়ে রুম শেয়ার করতে হচ্ছে।

আম্মির খুশির জন্য বিয়ে করেছি আপনাকে।সবসময় মনে রাখবেন এটা। আর হ্যা আমার সাথে বেশি কথা বলতে আসবেন না।কি মনে করেছেন আপনার জন্য এতোক্ষণ না খেয়ে আছি আমি?নাক্যা সাজছেন?বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি আমি। আপনার মতো আপনি থাকবেন,আমার মতো আমি।

আমি কখনোই আপনাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না।  

আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে অন্য কারো জীবন।খুব ভালোবাসি তাকে।তার নখের যোগ্য ও আপনি নন।

আমি আপনাকে কখনোই মেনে নিবো না।মাইন্ড ইট।

 আর হ্যা, ভুল করে হলেও যেন আম্মি এটা জানতে না পারে।


#খুব রাগি সুরে আবরার এসব বলেই একটা বালিস নিয়ে সোফার উপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরার সাথেসাথেই আবরারের ফোন টা বেজে উঠলো।শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কল টা

রিসিভ করে বলতে লাগলো,

আবরারঃআমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো।আরে বাবা হ্যা, আমি কি তোমাকে কখনো মিথ্যে বলতে পারি? তোমাকে দেখার জন্য মন টা খুব আনচান করছে। তাড়াতাড়ি এসো কিনতি।হুম বাই। love you too.

এসব বলেই ফোনটা রেখে আবার শুয়ে পরলো আবরার।


#মালিহা খুব করে চাইছে আবরার কে বলতে, 

মালিহাঃস্ত্রী হিসেবে যদি মেনে নিতে না ই পারবেন, তাহলে বিয়ে করলেন কেন?নিজের মায়ের কথা ভেবে আমার জীবন টা নষ্ট করলেন কেন? আমার ও একটা জীবন আছে এটা কি ভুলে গেছেন আপনি?   

আপনি কি জানেন বর্তমান যুগের মেয়ে হয়েও আমি ১০০% চরিত্র সম্পন্ন।জানেন খুব স্বপ্ন ছিলো আজকের রাতটা নিয়ে।খুব আশা ছিলো প্রথম রাতে বরের হাতটা ধরে বলবো, জীবনের এতো টা বছর শুধুমাত্র আপনার জন্যই নিজেকে পুরোপুরি হেফাজতে রেখেছি।যেখানে কোনো অপূর্নতা নেই।

ভেবেছিলাম খুব গর্ব করে বলবো এটা।আপনার কি একবার ও মনে হলোনা একটা মেয়ে কতোটা স্বপ্ন নিয়ে তার পরিবারের সবাইকে ছেড়ে স্বামীর হাতে ধরে চলে আসে একটা নতুন পৃথিবীতে।আপনি কি করলেন এটা।আমার নতুন পৃথিবী টা কে যে ডুবিয়ে দিলেন একরাশ অন্ধকারে।

এরকম হাজারো কথা আবরার কে বলতে চাচ্ছে মালিহা।

কিন্তু পারছে না।কিছুই বলতে পারছে না।সে যে কথা বলতেই ভুলে গেছে।

সে বুঝতে পারছে না এখন তার কি করা উচিৎ। 

আচ্ছা এখন কি কান্না করা উচিৎ?  

চিৎকার করে কান্না করা উচিৎ?  

হ্যা তাহলে হয়ত একটু হালকা লাগবে নিজেকে।

কিন্তু মালিহা যে কান্না করতে পারছে না।খুব চেষ্টা করেও একটু কাদঁতে পারছে না। 

সে যেন অনুভূতি শুন্য হয়ে গেছে।

এই মুহূর্তে খুব দরকার একটু কান্না করা।নাহলে যে চোখের পানির সাথে কষ্ট টা ধুয়ে যেতে পারবে না।

নাহ, মালিহা আর পারছে না।

দম বন্ধ হয়ে আসছে। 

শরীর টা নিস্তেজ হয়ে আসছে। 

কিন্তু তার তো বেচে থাকতে হবে।    

অনেক কাজ বাকি আছে এখনো।

যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখান থেকে এক চুল ও নড়তে পারছে না ও।

এভাবে থাকলে যে হবে না।কিছু একটা যে করতেই হবে ওকে।

হাতে থাকা সেই দোয়ার কাগজ টা বিছানার উপর রেখেই দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো মালিহা।

বাথরুমের দরজা বন্ধ করে সবগুলো পানির কল ছেড়ে দিলো।যাতে 

বাইরে থেকে কান্নার শব্দ শোনা না যায়।

ফ্লোরে বসে পরলো মালিহা। ঝিরঝির পানির ফোটায় তার সমস্ত শরীর ভিজে গেলেও স্পর্শ করতে পারছে না তার মন কে। 

মানুষের কষ্ট যখন তার সয্য সীমা অতিক্রম করে মানুষ তখন সে কাদঁতে ভুলে যায়। মালিহার ক্ষেত্রেও হয়ত এমন কিছুই হয়েছে। 

পানিগুলো মালিহার চুল স্পর্শ করে কপাল বেয়ে সূচালো নাকের ডগায় এসে সেখান থেকে টপটপ করে নিচে পরছে প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে।কয়েক টা ফোটা আবার তার ঠোঁট কেও স্পর্শ করে যাচ্ছে।

হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মালিহা।এ কান্না যেনো কোনো বাধ মানতে জানেনা।

চিৎকার করে কান্না করছে সে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তার স্মরণ হলো এভাবে কেঁদে তো কোনো লাভ নেই।এ কান্নার যে মূল্য দিবেনা কেউ।

নিজের কাছে নিজের ই খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে, আহারে আমি কত ই না অধৈর্য একটা মেয়ে।

বারবার ধিক্কার দিচ্ছে নিজেকে।এতোটুকু কষ্টেই সে কিভাবে ভুলে গেলো তার মাবুদ কে যিনি কিনা রহমানুর রহিম। যিনি চাইলেই সবকিছু ঠিক করে দিতে পারেন।যিনি বড্ড পছন্দ করেন বান্দার চোখের পানি।


#শাড়ি চেঞ্জ করে ওজু করে বাইরে এসেই জায়নামাযে দাঁড়িয়ে গেলো মালিহা।

দুই রাকাত সালাত আদায় করে দুই হাত পেতে দিলো মহান রবের রহমতের আশায়।

সব কষ্টের কথা খুলে বললো আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার কাছে।

কষ্ট টা ক্রমান্বয়ে ই হালকা হয়ে যাচ্ছে। 

সালাত শেষ করে জায়নামাজেই বসে আছে মালিহা।

কিন্তু নাহ্ সে তো পারছে না বসে থাকতে।চোখটা যেন বুজে আসছে।সারাদিন তো আর কম ধকল গেলো না ওর উপর দিয়ে।

ঘড়িতে এখন ৩:৩৫। আর একটু পরেই আজান হয়ে যাবে।

এখন ঘুমালে ফজরের সালাত টা কাজা হয়ে যেতে পারে।এজন্য আর ঘুমানো হলো না মালিহার। রুমের মধ্যেই আনমনে পায়চারী করছে আর ভাবছে, 

মালিহাঃ নাহ্ এভাবে কষ্ট পেয়ে থেমে গেলে চলবে না। বারবার উঠে দাঁডাতে হবে আমাকে।


#নিজেই নিজেকে বিভিন্ন ভাবে বুঝাচ্ছে মালিহা।

সুদূর থেকে মুয়াজ্জিন এর সুমিষ্ট কন্ঠে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি। 

সাথেসাথেই সালাত আদায় করে নিলো মালিহা।

সালাত থেকে উঠে আবরারের থেকে হাত খানেক দূরে ফ্লোরে বসলো ও। 

ডিম লাইটের আলোটা এসে আবরারের একদম মুখের উপর পরেছে।

যে আলোতে খুব নিষ্পাপ লাগছে ওর মুখটা। মালিহা মনে মনে ভাবছে,


মালিহাঃ

কে বলবে যে এই নিষ্পাপ চেহারার ভিতরে লুকিয়ে আছে 

এমন বিভৎস মন মানসিকতা। 

না না এ আমি কি ভাবছি।উনি হয়ত এমন নন। হয়ত শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রেই উনি এমন করে।

যাইহোক এখন তো উনাকে ডাকতে হবে।নাহলে সালাত টা যে কাজা হয়ে যাবে। ডাকবো নাকি ডাকবো না?

ডাকলে যদি রেগে যায়?  

কিন্তু আমার যে দ্বায়িত্ব উনাকে ডাকাটা।   

নাহ্ এভাবে দ্বিধাদ্বন্দে থাকলে হবে না।

আমার দ্বায়িত্ব আমাকে পালন করতেই হবে। তাকে বুঝাতে হবে। 

আল্লাহ চাইলে সত্যিই উনি একদিন সঠিক ভাবে দ্বীন বুঝতে পারবেন। 


#আর কিছু না ভেবেই মালিহা আসতে করে আবরার কে ডাকতে শুরু করলো,

মালিহাঃ এই যে শুনছেন, সালাতের সময় হয়েছে উঠুন। 

আবরারঃ..........(গভীর ঘুম)


মালিহাঃউঠুন, নাহলে যে সালাত কাজা হয়ে যাবে।

#আবরার একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো।

মালিহা বুঝতে পারছে না কি করবে এখন। 

হটাৎ করেই একটা বুদ্ধি এলো তার মাথায়।

পাশে থাকা জগ থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে অল্প করে ছিটিয়ে দিলো আবরারের মুখে।

ধরফর করে উঠে বসলো আবরার।

চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়িয়েই পাশে থাকা জগটা হাতে নিয়ে পুরো একজগ পানি ঢেলে দিলো মালিহার মাথায়।হাত থেকে জগ টা রেখেই 

ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো আবরার।

আবরারঃ.....


চলবে ইনশাআল্লাহ.........


লেখিকাঃরহিমা খানম


ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন বাকি পর্ব গুলো পোস্ট করবো কিনা সেটা আপনাদের লাইক এবং কমেন্টের উপর নির্ভর করবে।

আল্লাহর প্রিয় বান্দা পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন। 


ধন্যবাদ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইসলামিক গল্প:- দেখা হবে জান্নাতে

দেখা হবে জান্নাতে

ইসলামিক-গল্প:- দেখা হবে জান্নাতে